ঢাকা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটের সামনে কোন অ্যাম্বুলেন্স থামতেই হাতে প্লাকার্ড নিয়ে ছুটে আসে তিন চারজন মানুষ।
কমলা রঙের জ্যাকেট পরা মানুষেরা ধরাধরি করে রোগীকে এম্বুল্যান্স থেকে নামায়। কেউ হাতে তুলে নেয় রোগীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। কেউ আবার রোগীকে স্ট্রেচারে বসিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায় হাসপাতালের ভেতরে। তারা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'বৃহন্নলা'র স্বেচ্ছাসেবক মুনমুন, রুহী ও চাঁদনী। তাদের সঙ্গে আছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাদিকুল ইসলামও।
কোভিড রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামাচ্ছেন, স্ট্রেচার করে নিয়ে যাচ্ছেন, ঔষধ, খাবার কিনে দিচ্ছেন ইত্যাদি।
এছাড়াও গর্ভবতী নারী, অসুস্থ শিশু, বৃদ্ধ ও কোভিড রোগীদের স্বজনদের বিনা ভাড়ায় পরিবহন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গতবছর লকডাউন থেকে তাদের এই স্বেচ্ছাসেবার কার্যক্রম চলছে।
এই দলটির একটি বিশেষত্ব আছে। এই দলের ১৫ জনের মধ্যে ১০ জনই হলেন ট্রান্সজেন্ডার বাংলায় যা আমরা রূপান্তরিত লিঙ্গ এর মানুষ হিসেবে চিনি। অবাক হচ্ছেন? যেই মানুষগুলোকে সবসময় শুধুমাত্র পুরুষ বা নারী না হওয়ার কারনে সমাজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তারাই এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। যেখানে নিজের পরিবারের মানুষেরা সরে যাচ্ছেন, সেইখানে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন দূরে ঠেলে দেওয়া মানুষগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদিকুল ইসলাম ট্রান্সজেন্ডারদের উন্নয়নের জন্য ২৮ নভেম্বর ২০১৭ তে গড়ে তুলেছেন এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বৃহন্নলা। ট্রান্সজেন্ডারদের উন্নয়নে কাজ করার স্বীকৃতস্বরূপ ২০১৮ সালে “জয় বাংলা ইউথ এ্যাওয়ার্ড” পেয়েছেন। তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তারা কাজ করতে যেয়ে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে? জবাবে বলেন, “আমরা আসলে তেমন কোন সমস্যার সম্মুখীন হই নি। শুধু হিজড়ারা কাজ করে বলে মাঝে মাঝে দু চারটা বাজে কথা বলে দূরে দাঁড়িয়ে। কিন্তু আমরা তো এসব শুনে শুনে অভস্ত্য তাই কানে ঢুকে না, গায়েও লাগে না। আমরা আমাদের মত কাজ করে যাই।”