×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৮-১৫
  • ৫৭৩২ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও  তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর বিশ্ব মিডিয়া তাদের রাজনৈতিক মতামত জুড়ে অত্যন্ত আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং বাঙালি জাতির জন্য তাঁর পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেছে যে এই হত্যাকান্ড ছিল একটি বিশ্বাসঘাতকতা এবং তাঁর মৃত্যু নবজাতক জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। 

অল ইন্ডিয়া রেডিও আকাশবাণী ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট প্রথম ‘'যীশু মারা গেছেন’ বলে একটি ভাষ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী মর্মান্তিক সংবাদ প্রকাশ করে। আকাশবাণী মন্তব্য করে ‘এখন কোটি কোটি মানুষ ক্রুশ পরিধান করে যীশুকে স্মরণ করে। সম্ভবত, একদিন মুজিবকেও এমনিভাবে স্মরণ করা হবে।’

লেখক ও গবেষক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের এক নিবন্ধে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন। প্রবন্ধটি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন সম্পাদিত সংকলন ‘বাংলাদেশ চরর্চা’য় প্রকাশিত হয়। কাদেরের ‘ভারতীয় মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড’ শিরোনামের নিবন্ধ অনুসারে, ভারতীয় সংবাদপত্র ইকোনমিক টাইমস ১৭ আগস্ট ‘মুজিবের মৃত্যুতে ভারত শোকাহত’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে।

ভারতের মর্যাদাবান সংবাদপত্র দ্য স্টেটসম্যান তার প্রধান শিরোনাম করে, ‘মুজিবের মর্মান্তিক মৃত্যুতে বাংলাদেশের শোকের দিকে নজর রাখছে ভারত।’ পত্রিকাটি তার অর্ধ-পৃষ্ঠাজুড়ে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবনী প্রকাশ করে। এর শুরুটা ছিল চমৎকার একটি বাক্য দিয়ে, ‘সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণার পেছনের প্রেরণা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।’

১৭ আগস্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড, বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ১৬টি পৃথক সংবাদ প্রকাশ করে। একটি সংবাদ শিরোনাম-“বাংলা এখনও বিচ্ছিন্ন”, বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ স্থগিত করার বিষয়টি তুলে ধরে। আরেকটি সংবাদের শিরোনাম ছিল- “বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে”।

অন্য একটি প্রতিবেদনে টাইমস অব ইন্ডিয়া উল্লেখ করেছে যে খন্দকার মুস্তাক তার সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী পাঠানোর পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতিও উল্লেখ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন, রাজনৈতিক উত্থান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, একটি স্বাধীন জাতি গঠনে তার ভূমিকা এবং তার অসাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনা তুলে ধরে -“সোনার বাংলার জনক” শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।

১৮ আগস্ট ভারতীয় বাংলা দৈনিক যুগান্তর -“একটি দুঃসংবাদ, কিছু বেদনা-বিধুর স্মৃতি” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বর্ণনা করা হয়েছে যে কীভাবে কলকাতাবাসী দুঃখজনক খবরটি পেয়েছে। বাংলাদেশে হত্যাকান্ড ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে দৈনিকটি। যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার মিহির গাঙ্গুলী একটি গল্পে লিখেছেন যে, কীভাবে কলকাতাবাসী ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে খবর পেল। "যাদের নিয়মিত বিদেশী রেডিও শোনার শখ আছে, তারা প্রথমে শেখ মুজিবের হত্যা এবং বাংলাদেশে পরিবর্তনের দুঃখজনক সংবাদের মধ্য দিয়ে যায়।" ঢাকা থেকে ফোনে খবর পেয়েছেন বলে গাঙ্গুলি জানান যে মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় এবং খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং ঢাকা আবার উগ্র শাসনের অধীনে চলে যায়।

ওয়াশিংটন পোস্ট তার প্রতিবেদনে মন্তব্য হিসেবে পত্রিকাটি বলেছিল, বঙ্গবন্ধুর এই মৃত্যু তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি একটা ব্যক্তিগত আঘাতও বটে, যিনি প্রায়ই বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র বিষয়ক নীতিমালায় সমর্থন দিতেন।

বৃষ্টিভেজা সকালে ঢাকা থেকে সংবাদটা এসেছিল বজ্রপাতের মতো। ভারতে সবেমাত্র ঘোষিত হওয়া জরুরি অবস্থাকে ঘিরে দেশের পরিস্থিতি এমনিতেই টালমাটাল, তখনই খবর এল বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় নিজের বাসভবনেই আততায়ীদের হাতে সপরিবারে নিহত হয়েছেন।  কিন্তু শেখ মুজিবের প্রাণনাশের চেষ্টা হতে পারে, ভারত কি তার একেবারেই কোনো আঁচ পায়নি? মানে এই খবরটা কি দিল্লির কাছে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল বলা যায়? 'না, একেবারেই আন্দাজ করা যায়নি সেটা বলা যাবে না। খবরও ছিল যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা অংশ মুজিবের বিরুদ্ধে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে,' বলছেন দিল্লিতে ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের কর্ণধার ও স্ট্র্যাটেজিক বিশ্লেষক, মেজর জেনারেল (অব) দীপঙ্কর ব্যানার্জি। তিনি বলেন, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং ('র')-এর প্রধান আর এন কাও ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় গিয়ে খোদ মুজিবকে বলেও ছিলেন যে তার জীবনের ওপর হামলা হতে পারে। তিনি জানান, 'কিন্তু মুজিব তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে বলে ওঠেন, ওসব হতেই পারে না। গোটা বাংলাদেশ আমাকে ভালবাসে, ওরা সবাই আমার ছেলেমেয়ের মতো কে আমাকে মারতে যাবে? আপনার এসব জল্পনায় কান দেয়ার কোনো দরকার নেই।' মূলত বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষদের এতোই বিশ্বাস করতেন যে, তিনি কখনো ভাবতেই পারতেন না নিজের মানুষরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat