×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-১০-২৯
  • ৫৫৮ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিলো ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। কর্ণফুলী নদীতে তিনটি ব্রিজ নির্মিত হলেও অতি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য যথেষ্ট না। তিনটি সেতু নির্মাণের ফলে ইতিমধ্যে পলি জমে কর্ণফুলী নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা যাচ্ছে। যা চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য হুমকি। এ কারণেই সেতুর পরিবর্তে টানেল নির্মাণের উদ্যেগ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে যুক্ত করে উন্নয়নকাজ ত্বরান্বিত করবে। স্বপ্নের এই টানেল চালু হবার ফলে কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে ওয়ান সিটি টু টাউন। এই টানেল মূলত দক্ষিণ চট্টগ্রামকে সারা দেশের সাথে সংযোগ করবে। কক্সবাজারের সাথে ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমাবে এই টানেল। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী গাড়িগুলোকে আর বন্দরনগরীতে ঢুকতে হবে না। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। ফলে চট্টগ্রাম নগরে যানবাহনের চাপ কমে যাবে। টানেলকে ঘিরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের আরও বিকাশ ঘটবে।

এটি শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না, ট্রানজিট সুবিধা থাকায় এর মাধ্যমে  বাংলাদেশ সরকার রাজস্ব আয় করবে এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সর্ম্পক বৃদ্ধি পাবে।

ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে শিলিগুড়ি করিডোর দিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় এই সাতটি রাজ্য সংযুক্ত। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সড়ক এবং আকাশপথ একমাত্র ভরসা। কিন্তু ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে সড়ক এবং আকাশপথে মালামাল পরিবহন ব্যয়বহুল। এই জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে ট্রানজিট চুক্তি করেছে মাতারবাড়ি ও চট্টগ্রাম ব্যবহার করে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করার জন্য। ভারতের যে পরিমান পেট্রোলিয়াম এবং গ্যাসের মজুদ আছে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ এই সাত রাজ্যে পাওয়া যায়। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম বঙ্গবন্ধু টানেল ব্যবহার করে মাতারবাড়ি ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে পরিবহন করা যাবে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল আর বাংলাদেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি তথা সংযোগ প্রসারের একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা নিয়েছে টোকিও যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো একটি ‘সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তোলা।

জাপানের অর্থায়নে বাংলাদেশের মাতারবাড়িতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখান থেকে ত্রিপুরার সাবরুম পর্যন্ত একটি মাল্টিমোডাল করিডর গড়ে তোলারও প্রস্তাব করেছে টোকিও। মাতারবাড়ি থেকে সাবরুম মাত্র ১৮০ কিলোমিটার দূরে। ফলে ওই পথে যদি ফোরলেন হাইওয়ে ও রেল সংযোগ গড়ে তোলা যায় তা গোটা অঞ্চলের জন্য ‘গেম চেঞ্জারহিসেবে কাজ করবে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। জাপানের সহযোগিতায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা হবে। এই মুহূর্তে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানির ওপর ভারত যে অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি বসিয়েছে তা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা। কারণ, বাংলাদেশের পাট গুণ-মানে ভালো এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরিতেও সহায়ক। ফলে এতে আখেরে ভারতেরও লাভ হবে।

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বড় একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে কানেক্টিভিটি। বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার পর থেকেই দুই দেশের কানেক্টিভিটি প্রকল্পগুলোয় গতি এসেছে। ভারতে আসামের নয়া ধুবড়ি থেকে মেঘালয়ের ফুলবাড়ি পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু। এ সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। এটি নির্মাণ হলে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ভারত হয়ে সড়ক চলাচল সহজ হয়ে আসবে। প্রক্ষেপণ রয়েছে, সেতুটির নির্মাণকাজ শেষে সংশ্লিষ্ট সড়কটির ওপর দিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে চলাচলকারীর সংখ্যা গড়ে প্রায় ৩০ লাখে পৌঁছাবে। একই সঙ্গে বার্ষিক পণ্য পরিবহনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ কোটি ১৮ লাখ টনেরও বেশিতে। এছাড়া ধুবড়ি থেকে ফুলবাড়ি পর্যন্ত যাতায়াতের পথ ৮ ঘণ্টা থেকে মাত্র ২৩ মিনিটে নামিয়ে আনবে সেতুটি। ধুবড়ি-ফুলবাড়ি সেতু নির্মাণ শেষ হলে এর দুই পাশে বাজার ও সেবা খাতের ব্যাপক প্রসার হবে বলে আশাবাদী খাতসংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে গ্রামীণ কৃষিপণ্যের বাজার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান খাতেরও ব্যাপক উন্নয়নের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে হলে বাংলাদেশকে শুধু উত্তর-পূর্ব নয়, গোটা ভারতের কথাই মাথায় রাখতে হবে। কানেক্টিভিটি তৈরি হলে ব্যবসার সুযোগ বাড়বে। এই কানেক্টিভিটি তৈরিতে বঙ্গবন্ধু টানেল ঈর্ষনীয় ভূমিকা পালন করবে। অর্থনৈতিক উন্নতিতে এর পরের ধাপগুলো নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রস্তাবও দিয়েছে বাংলাদেশ। যেমন: ক) ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা (ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার) নির্মূল করা। খ) মাতারবাড়ি বন্দর ২০২৭ সালে  চালু হলে ভারতের ল্যান্ড-লকড (স্থলবেষ্টিত) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য তা বঙ্গোপসাগরের দরজা উন্মুক্ত করে দেবে। ফলে সেই বন্দরের সঙ্গে উপযুক্ত সংযোগ গড়ে তোলার দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

মূলত এই টানেলের মাধ্যমে মাতারবাড়ি থেকে সেভেন সিস্টার্স হবে নতুন বিজনেস হাব। দুই দেশের বাণিজ্যও বাড়বে অধিক। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat