×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৭-০৯
  • ৫৩০ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীতে ভরে গেছে। আলাদা ওয়ার্ড বা ইউনিট চালু করেও রোগীর চাপ সামলানো যাচ্ছে না। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়তি শ্রম দিয়েও রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৮২০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।এ বছর এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এটাই সর্বোচ্চ। একই সময় মারা গেছে আরো দুজন।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নতুন করে আরো দুটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে তিনটি ওয়ার্ড খোলা হলেও রোগীর চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

একই অবস্থা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। ঢাকার এসব হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শয্যার কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এসব রোগীর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে।

সেবা দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু হিমশিম খাচ্ছি

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে হারে রোগী বাড়ছে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো যথেষ্ট জনবল বা সুযোগ-সুবিধা নেই।

হাসপাতালের করিডরসহ তিনটি ওয়ার্ড করা হয়েছে, কিন্তু জায়গা হচ্ছে না। নতুন করে আরো দুটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করছি।’

হাসপাতালটিতে সক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনটি ডেডিকেটেড ওয়ার্ড ব্যবস্থাপনার জন্য চিকিৎসক-নার্সদের যে বাড়তি সেবা দিতে হচ্ছে, এ জন্য চাপ পড়ে গেছে। আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু হিমশিম খাচ্ছি।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সবচেয়ে বেশি ৩৪৭ জন ডেঙ্গু ভর্তি রয়েছে ঢাকার মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

এর পর রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি ২২৪ জন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি ১৭০ জন এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ৫৫ জন।

কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নাজমুল হক বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর অনেক চাপ, হাসপাতাল ভরে গেছে। দৈনিক ৪০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী আসে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ভর্তি ২০০ জনের বেশি। আবার চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে গেছেন। এতে আমরা চাপের মধ্যে আছি। এখনই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। আমাদের এখানে যত রোগী আসছে, ভর্তি করছি। কিন্তু এখানেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ জন্য রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না।’

সেবা দিতে পারলেও শয্যা দেওয়া কঠিন : স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ট হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. রাশেদ উন নবী বলেন, একজন রোগী ভর্তির পর ছয়-সাত দিন চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে শয্যা খালি হতে বেশি সময় লাগছে। অন্যদিকে নতুন রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

তিনি বলেন, ‘আমার এখানে সেবা পাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু শয্যা পাওয়া নিয়ে অনেক সমস্যা। আমরা আরো ৩০০-৪০০ রোগীর সেবা দিতে পারব। এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’

কী চিকিৎসা পাচ্ছে রোগীরা

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রধান চিকিৎসা হলো ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট। যেসব রোগী মুখে খাবার খেতে পারছে না, তাদের দেওয়া হচ্ছে নরমাল স্যালাইন। আর যারা মুখে খাবার থেকে পারছে, তাদের দেওয়া হচ্ছে খাবার স্যালাইন। এর বাইরে জ্বর বেশি হলে প্যারাসিটামল সঙ্গে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। চিকিৎসকরা রোগীদের তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

হাসপাতালে ভর্তি ১২ হাজার ছাড়াল

দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরো ৮২০ জন। নতুন রোগীদের নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ১১৮ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৬৭ জন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট দুই হাজার ৫০২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৭৭৩ জন ঢাকার এবং ঢাকা বিভাগের বাইরের ৭২৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযাযী, গত বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৮১ এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩৮২। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বাইরের ছিল ২৩ হাজার ১৬২ জন।

ঢাকার বাইরে পরিস্থিতি জটিল

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে রোগীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। সামনে এটি আরো বাড়বে। কারণ সেখানে চিকিৎসাব্যবস্থা খুব বেশি ভালো না। রোগীর চাপে একসময় হাসপাতালগুলো তাদের সক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। এতে মৃত্যু বাড়বে।

সমন্বয়হীনতায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক হয়েছে : টিআইবি

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, কার্যকর পরিকল্পনা ও পূর্বপ্রস্তুতির ঘাটতির কারণে রাজধানীসহ প্রায় সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, বড় বড় সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিক্ষিপ্তভাবে অকার্যকর কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ১৫ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে সংস্থাটি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ঢাকা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ১৫ দফার এই সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে। সেই সুপারিশ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবারও পাঠিয়ে এর ভিত্তিতে তারা কর্মসূচি গ্রহণের আহবান জানিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat