×
  • প্রকাশিত : ২০২১-০১-১০
  • ৮৬২ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ রাসেল জন্মগ্রহণ করেছিল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর রাতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসার সঙ্গেই থাকতাম আমরা। দুই পরিবারের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। জন্মের দিন ভোরের দিকে ছুটতে ছুটতে শেখ রেহানা এসে খবর দিল যে তার ছোট ভাই হয়েছে। শেখ রাসেল যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন বঙ্গবন্ধু ঢাকায় ছিলেন না। দলীয় কাজে তিনি তখন চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। রাসেলের জন্ম নেওয়ার খবর শুনে তিনি খুব দ্রুত ঢাকায় এলেন। ছেলেকে দেখে অনেক খুশি হয়েছিলেন। কোলে নিয়ে ছেলের নাম রাখলেন রাসেল। রাসেল নাম রাখার পেছনে একটা কারণ আছে। বার্ট্রান্ড রাসেল বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয় লেখক ছিলেন। কারাগারে থাকাকালে তিনি যত লেখকের বই পড়তেন, তার মধ্যে বার্ট্রান্ড রাসেল অন্যতম। এ জন্যই তিনি ছেলের নাম রাখেন রাসেল।

শেখ রাসেল পরিবারের সবার ছোট হওয়ায় সবাই তাকে খুব আদর করত। বঙ্গবন্ধু যখন বাড়িতে থাকতেন তখন দলীয় নেতাকর্মীসহ অনেক লোক আসত বাড়িতে। তারা রাসেলকে আদর করত; কিন্তু তাকে দেখতাম, একটু বিরক্ত হতো। সে সব সময় নিজের মতো করে থাকতে পছন্দ করত। বাড়ির কাজের লোকদের সঙ্গে খেলতে বেশি পছন্দ করত রাসেল। তার সবচেয়ে পছন্দের প্রাণী ছিল গরু ও মুরগি। এসবের সঙ্গে অনেক সময় কাটাত। শেখ জামালের সঙ্গে তার খুনসুটির সম্পর্ক ছিল। যদি কখনো তাদের মধ্যে একটু খুনসুটি হতো, সঙ্গে সঙ্গে মায়ের কাছে নালিশ করত রাসেল। মা ছিল তার সব অভিযোগ, অনুযোগ ও আবদারের জায়গা।

শেখ রাসেল পরিবারের সবার ছোট হওয়ায় সবাই তাকে খুব আদর করত। বঙ্গবন্ধু যখন বাড়িতে থাকতেন তখন দলীয় নেতাকর্মীসহ অনেক লোক আসত বাড়িতে

ডিম ভাজির সঙ্গে চিনি ছিল রাসেলের প্রিয় খাবার। তার এই ব্যতিক্রমী অভ্যাসটা আমাকে অনেক আকর্ষণ করত। অনেক বুদ্ধিমান ও শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল। নিজের খাবার সব সময় অন্যের সঙ্গে ভাগ করে খেত। তবে সহজে সেভাবে কারো সঙ্গে মিশে যেতে পারত না। আরেকটি মজার বিষয় হলো, সে একজন শিক্ষকের কাছে বেশিদিন পড়ত না। তবে শেষ পর্যন্ত গিতালী দাসগুপ্ত বলে বাংলার এক শিক্ষক ছিলেন, যাঁর সঙ্গে তার ভাব জমে ওঠে। রাসেলের জন্মদিন এলে এই স্মৃতিগুলো আমাকে খুব আনন্দ দেয়। তবে সবচেয়ে কষ্ট দেয় যখন ১৫ই আগস্টের কথা মনে পড়ে। ঘাতকরা যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে আসে, তখন রাসেলকে গেটের বাইরে রাখা হয়েছিল। প্রচণ্ড গুলির আওয়াজ হচ্ছিল সেই সময়। সেদিন আমরা কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি। গুলির আওয়াজে রাসেল ভয় পেয়ে কান্না শুরু করে, আম্মুর কাছে যেতে চায়। কান্নার আওয়াজ পেয়ে ঘাতক সেনা সদস্যরা তাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলে হ্যাঁচকা টানে ভেতরে নিয়ে যায়। সেই যাওয়াই ছিল তার শেষ যাওয়া, আর কখনো ফিরে এলো না। একটা ছোট্ট শিশুকে মারতেও ওদের হাত কাঁপেনি। এটা ইতিহাসের অত্যন্ত কলঙ্কজনক একটি অধ্যায় হিসেবে থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat