মওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী-বিরোধী সাম্প্রতিক
গণ- বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে এদেশে মওদদীবাদ ও ধর্ম ব্যবসার রাজনীতির অগ্রহণযোগ্যতা আবারো
প্রমাণিত হয়েছে। গত বছরের ১৮ ডিসে. বর জামাতের মজলিসে শারায় সাঈদীর অন্তর্ভুক্তির
পর পরই দেশের আলেম সমাজসহ সর্বস্তরের মানষে সাঈদীর ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠেন। সিলেট,
ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্হানে জামাতের মণ্ডনায়ক সাঈদীর বিরদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত
জনমত গড়ে ওঠে। দলমত নির্বিশেষে সকল মহলের বিরোধিতার মখে সিলেট থেকে সাঈদীকে বিতাড়িত
করা হয়, দেশের বিভিন্ন স্হানে তার মাহফিলের অনুমতি প্রত্যাহার করা হয়। নাছোড়বান্দা
সাঈদী তারপরও গোপনে রাতের অন্ধকারে কিছ, স্হানে প্রবেশ করেন। কড়া পলিশ প্রহরায়, জামাতের
সশস্ত্র ক্যাডারদের উপস্হি তিতে তার বক্তব্য রাখেন। এসব ম্রিয়মান মাহফিলের চরিত্র
এবং ক্ষীণত্ব সাঈদীর ধর্মব্যবসায়ী বর পকে আরো প্রকাশ্য, খোলামেলা করে তোলে। সমালোচনায়,
আন্দোলনে, হরতালে সাঈদী একনিমিষে উঠে আসেন গোলাম আজমের মতো গণধিক- কত পরিচিতিতে।
সাঈদীর উত্থান পর্ব:
রাজধানী ঢাকার সাঈদী পরিচিতির সূচনা ঘটে ১৯৭৫
সনের দিকে। সে সময় পরনো ঢাকার আরমানীটোলার একটি মাহফিলে তিনি তফসীর করেন। সেই মাহফিলের
অন্যতম উদ্যোত্তা চকবাজার শাহী মসজিদের খতিব মওলানা কারী ওবায়েদ,লাহর দেয়া তথ্যানুযায়ী
সে সময় প্রতি বছরই আরমানীটোলা তফসীরল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করা হত। ৭৫ কিংবা ৭৬ সনের
এরকম একটি মাহফিল আয়োজনের পর্যায়ে কিছ, মসলা (মওলানা ওবায়েদ উল্লাহ বলেন পরে শুনেছি,
তারা জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল।') সাঈদীকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব
করেন। সাঈদী সে সময় খলনায় মোটামটি পরি চিত হলেও ঢাকায় তাকে সেভাবে কেউ চিনতেন না।
আরমানীটোলা মাহফিলে আমন্ত্রিত হবার পর সাঈদী প্রথম
ঢাকায় তফসীর করার সংযোগ পান। অত্যন্ত দ্বীনবেশে সাদামাটা পোশাকে মাহফিলে আগত সাঈদীর
থাকা খাওয়ার ব্যবস্হা মাহ- ফিল কমিটির পক্ষ হতেই করা হয়। আরমানীটোলার পর সাঈদী লালবাগ
ও চকবাজারে আরো দুটো মাহফিলে তফসীর করেন। এসব মাহফিলে সর্বপ্রথম তিনি গানের সরে কোরআনের
তফসীর করা শরে, করেন। ইসলামসম্মত নয় বলে স্থানীয় আলেম উলামা গণ এর সমালোচনা করেন
এবং পরবতীতে সেই মাহফিল কমিটি বিতর্কিত সাঈদীকে আর কখনও আমন্ত্রণ জানানো হতে বিরত থাকে।
আরো
পিরোজপুরের এই মওলানার জীবনে বিতর্কের সূচনা আগে
থেকেই। শর্ষীনা মাদ্রাসায় পাঞ্জ ক্লাসের ছাত্র
থাকাকালীন অবস্হায় জামাত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট থাকার
সন্দেহে তাকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়া হয় বলে তারই এক সময়ের সহকর্মী মওলানা ইসহাক
ওবায়েদী জানান। শর্ষীনা মাদ্রাসার পর তিনি খুলনার আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সে
মাদ্রাসা থেকে তিনি কামেল (দাওরায়ে হাদীস) ডিগ্রী আদৌ লাভ করেছেন কি না এ নিয়ে দেশের
আলেম সমাজেই প্রচর সন্দেহ রয়েছে। দেশের শতাধিক আলেম এ বিষয়ের সত্যতা প্রমাণের জন্য
সাঈদীর প্রতি একাধিকবার চ্যালেঞ্জ ছড়ে দিলেও সাঈদী কখনই সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি।
সাঈদীর ইসলাম শিক্ষার পরিপূর্ণতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তার কন্ঠ চটলতা এবং শ্রোতা আকর্ষণ
ক্ষমতা বরাই দ্বিধাহীনভাবে স্বীকৃত। বিভিন্ন সূত্রের দেয়া তথ্যান যায়ী স্বাধীনতাষদ্ধের
আগে এই কন্ঠসম্পদকে অবলম্বন করে সাঈদী পিরোজপুরের গড়ের হাটে সরে করে আতর, তসবীহ ধর্মীয়
পস্তক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্বাধীনতা- যদ্ধের সময় তার বিরদ্ধে লাটপাট
ও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মাসিক নিপণে পত্রিকার জুলাই '৮৭ সংখ্যায়
মক্তিযোদ্ধা সংসদের পাড়েরহাট ইউনিয়নের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়
'সাঈদী স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক-হানাদারবাহিনীর
প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় লিপ্ত ছিলেন। তিনি ধর্মে'র দোহাই দিয়ে গণিমতের মাল হিসেবে পাড়েরহাট
বন্দরের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর লট করেছেন। এবং মদন নামের এক হিন্দ, ব্যবসায়ীর
দোকানঘর ভেঙে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। মক্তিযুদ্ধের পর সাঈদী দীর্ঘ সময় পালিয়ে
থাকেন এবং দশ বছর পর নিজ গ্রামে আসেন।"
স্বাধীনতার পর সাঈদীকে প্রকাশ্যে প্রথম চট্টগ্রামে
দেখা যায় বলে স্থানীয় একজন অলেম জানান। এ সময় নির্মীয়মাণ একটি মসজিদের জন্য মাইক
দিয়ে ভ্রাম্যমান অবস্হায় তিনি চাঁদা সংগ্রহ করতেন। তার সরেলা কন্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গি
জামাত সংশ্লিষ্ট অরাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদকে আকষ্ট করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের
পরবর্তী সেসময়ে জামাতের সকল তৎপরতা অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে পরিচালনা করা হত। সমাজকল্যাণ
পরিষদের এমাবরণে জামাত তাফসীর মাহফিলের আয়োজন্যের মাঝেই তাদের তৎপরতা সীমিত রাখতো।
সমাজকল্যাণ পরিষদ আর্থিক সংবিধা প্রদানের বিনিময়ে সঈদীকে তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধিতে
ব্যবহার শরন করে। আর এভাবেই জামাতের মাউথপিস হিসেবে সাঈদী এক পর্যায়ে জামাত বলছে সংশ্লিষ্ট
হয়ে পড়েন। সাঈদী পরিচয় গোপন করেছিলেন
জামাতে ইসলামের সাংগঠনিক বিন্যাসের একটি পর্যায় হচেছ মজলিসে সরায় অন্তর্ভুক্তি। গঠনতন্ত্র অনযায়ী সহযোগী সদস্য- কর্মী-রোকন পর্যায় পার হয়েই কেবল একজন মজলিসের সদস্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাঈদীর মজলিসে সূরায় অন্তর্ভক্তি জামাত রাজনীতির সঙ্গে তার দীর্ঘকালের সম্পর্কের কথাই প্রমাণ করে।
লেখক- আসিফ নজরুল
সূত্রঃ সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ১০ ফেব্রুয়ারি,১৯৮৯