×
  • প্রকাশিত : ২০২১-০৩-১৮
  • ২০৮৩ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবনে যদি কখনো সুযোগ আসে তাহলে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতে চান তিনি। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে। এলএলবি এবং এলএলএম পরীক্ষায় তিনি ছিলেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ১৯৯৬ সালে নিজ যোগ্যতায় পেয়েছিলেন কমনওয়েলথ বৃত্তি। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের উপর অর্জন করেছেন পিএইচডি ডিগ্রি। বলছিলাম বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম নারী স্পিকার, কমনওয়েলথ স্কলার . শিরিন শারমিন চৌধুরীর কথা।

 

১৯৬৬ সালের অক্টোবর তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। নোয়াখালীর চাটখিলে দাদা বাড়ি আর সিলেটের বড়লেখায় নানা বাড়ি হলেও ঢাকাতেই বড় হয়েছেন শিরিন। তাঁর বাবা রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রজীবন থেকে যুক্ত ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি এবং ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আর মা অধ্যাপক নাইয়ার সুলতানা শিক্ষকতা পেশায় থেকে পালন করেছেন নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সর্বশেষ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মেম্বার ছিলেন।

 

মোট কথা একটা গুণী পরিবারে বেড়ে উঠেছেন শিরিন শারমিন। অর্জন করেছেন দেশসেরার স্বীকৃতি। ছোটবেলা থেকে আইন পেশার প্রতি দুর্বলতা ছিল তাঁর। লেখাপড়া শেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেই তিনি আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। বহু রাজনীতিবিদের মামলা লড়েছেন, যার মধ্যে অনেকেই ছিলেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা। বাবার কল্যানে ছোটবেলা থেকেই শিরিন শারমিন রাজনীতিবিদদের দেখেছেন খুব কাছে থেকে।

 

একজন নারী সংসদ সদস্য হিসেবে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শিরিন শারমিন চৌধুরী। নিজ গুনে জায়গা করে নেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

 

২০১৩ সালে সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি মহিলা শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে তিনি নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে সাবেক স্পিকার বর্তমান রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি বাংলাদেশের সর্ব কণিষ্ঠ স্পিকারও বটে। দেশের সীমানা অতিক্রম করে এই নারী বিদেশের মাটিতেও নিজ দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। ২০১৪-২০১৭ সাল পর্যন্ত পালন করেছেন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী অ্যাসোসিয়েশান- সিপিএ এর চেয়ারপার্সনের দ্বায়িত্ব। ১৯৭৩ সালে এই ফোরামের অন্তর্ভূক্ত হয় বাংলাদেশ। তার পর থেকে এই প্রথম সিপিএ সর্বোচ্চ কোন পদে আসীন হয় বাংলাদেশ।

 

দেশের জন্য এই অভূতপূর্ব সম্মাননা বয়ে নিয়ে আসেন নিজ গুনে অনন্য শিরিন শারমিন চৌধুরী। চেয়ারপার্সন থাকা কালীন তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, যার মধ্যে অন্যতম লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবিতে অনুষ্টিত কমনওয়েলথ ডে তে স্বভাপতিত্ব করা। এই অনুষ্ঠানে উপস্থির ছিলেন স্বয়ং রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং বৃটিশ রাজ পরিবারের অন্যান্য সদস্যগন।

 

নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন নারী নির্যাতন রোধে . শিরিন শারমিন কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। কর্মজীবনের সফলতায় একের পর এক অর্জন তাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধি করেছে। তার মধ্যে অন্যতম ২০১৫ সালে পাওয়াওম্যান লিডারশিপ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড মুলধারার উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহনে অবদান রাখায় তাকে এই সম্মাননায় ভূষিত করে ওয়ার্ল্ড ওম্যান লিডারশিপ কংগ্রেস। এছাড়াও ২০১০ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ মূলধারার উন্নয়নে নারীর অবদান বাড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখায় তাঁর হাতে তুলে দেয়া হয়এশিয়া সোসাইটিজ হিউম্যানিটেরিয়ান সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড

 

এলএলবি অনার্স পড়াকালীন সময়ে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে সৈয়দ ইশতিয়াক হোসাইনের সঙ্গে যুগল জীবনের শুভ সূচনা হয়। তাঁদের ঘর আলো করে আছে দুই সন্তান। রাজনীতির পাশাপাশি ঘর-কন্যা সামলে নেন নিপুন হাতে। তিনি ভূষণে আধুনিক, রন্ধনে সিদ্ধ হস্ত আর বিদ্যায় গরীয়সি! অবসরে কখনো সঞ্চিতা, কখনো সঞ্চয়িতা কিংবা গীতবিতান ডুবে যান। এছাড়াও তিনি পড়েছেন পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখকদের বই, যা এখনো পড়েন।

 

 প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি স্ব মহিমায় উজ্বল। অবদান রেখেছেন নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সহ নানামুখী নারী উন্নয়ন প্রকল্পে। নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১সংসদে পাস হয় তিনি প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায়। আজকের প্রতিটি নারীর আগামীর পথচলা মসৃন হোক শিরিনের অনুপ্রেরণায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat