×
  • প্রকাশিত : ২০২১-০৩-০৭
  • ৩৮৯০ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
দিনটি ছিল রবিবার, তারিখ হিসেবে ৭ মার্চ ১৯৭১। হাতের মুঠোয় মৃত্যু আর চোখে স্বপ্ন নিয়ে রেসকোর্স ময়দানের জনস্রোতে সেদিন এসেছিলেন বাংলার শ্রমিক, কৃষক-কৃষানী, যুবক-যুবতী, ছাত্র-শিক্ষক, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, কেরানী, নারী, বেশ্যা; সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া শিশুকে বুকে জড়িয়ে এসেছিলেন মাও, এমনকি বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে যাওয়া বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও। লাখো মানুষের পদভারে মুহুর্তেই রেসকোর্স ময়দান জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

শত বাঁধা ও হানাদারদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এইচএম সালাহউদ্দিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবুল খায়ের সামিল হলেন জনসমুদ্রে, যেভাবেই হোক ভাষণ রেকর্ড করতে হবে তাদের। ক্যামেরাম্যান হিসেবে যুক্ত হলেন ডিএফপির কর্মকর্তা অভিনেতা আবুল খায়ের।

অতঃপর শুধু অপেক্ষা

কখন আসবেন কবি…

ইতোমধ্যেই ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করেছেন বঙ্গবন্ধু। ক্ষোভ, দ্রোহ আর বিপ্লবের গর্জনে সেদিন কাঁপছিলো এই নগরী, সর্বোপরি এই জনসমুদ্রের গর্জন সেদিন শুনেছিলো গোটা বিশ্ব।

সময়ের কাটা তিনটা পেড়িয়েছে কেবল, দৃশ্যপটে আসলেন ইতিহাসের মহানায়ক। ঐ তো কবি আসছেন বীরের বেশে, সত্যিকারের বীর হয়ে, যার চাহনিতেই কেঁপে উঠে শত্রুর মসনদ, যাকে দেখলে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ পায় বাঁচার সাহস।

হাতে আলোকবর্তিকা নিয়ে, কোটি মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে সেদিন উত্তাল রেসকোর্স ময়দানে জাতির ত্রাণকর্তা রুপে ধরা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। শোষিত শ্রেণীর নেতা বঙ্গবন্ধুকে দেখে রেসকোর্সের উত্তাল জনসমুদ্র সেদিন একসঙ্গে লাফিয়ে উঠছিল। সব মানুষ যেন আনন্দে উত্তেজনায় একাকার। লাখো জনতা যেন কন্ঠে বল ফিরে পেল, তাঁদের মুজিব ভাই এসে গেছে,

ঘড়িতে তখন ৩টা ২০ মিনিট

বুক চিতিয়ে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন রাজনীতির মহাকবি। ‘ভায়েরা আমার’ বলে শুরু করলেন তাঁর অমর মহাকাব্য...

তর্জনি উঁচিয়ে তিনি পাঠ করেছেন এক অনবদ্য কাব্য, এ যেন অমর মহাজাগতিক জীবন্ত মহাকাব্যাংশ। মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু দিচ্ছেন বজ্র আহ্বান, পাকিস্তানীদের অন্যায় অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি গাইছেন শিকল ভাঙার গান।

কখনো কখনো বঙ্গবন্ধু উপস্থিত জনতার কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন “আমার উপর বিশ্বাস আছে?” উপস্থিত জনতা লাঠিসমেত হাত শূন্যে তুলে চিৎকার দিয়ে বলছেন ‘আছে’। জনসাধারণের সঙ্গে একজন নেতার কি পরিমাণ বিশ্বাসের সম্পর্ক থাকলে লাখো জনতার সামনে দাঁড়িয়ে একজন নেতা এই প্রশ্ন করতে পারেন, তা কেবল অনুমান করা যায়, অনুধাবন করা যায়! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নেতা সত্যিই বিরল। বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের ইতিহাসে একজন অনন্য সংবেদনশীল নেতা যিনি জাতির প্রাণের স্পন্দন টের পেয়েছিলেন। তর্জনীর এক ইশারায় বঙ্গবন্ধু একটি জাতিকে, একটি দেশকে একত্রিত করে একই দাবিতে সোচ্চার করে শোনালেন তার অমর বাণী ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।‘ সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।

দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত হতাশা, শোষণ আর বঞ্চনায় তিলে তিলে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাওয়া জাতি সেদিন খুঁজে পেয়েছিল তাঁদের মুক্তির পিতা। বঙ্গবন্ধুর বজ্র হুংকার সেদিন কাঁপিয়ে দিয়েছিল শত্রুর কাফেলা, উত্তাল করে তুলেছিল রেসকোর্স ময়দান। সবার চোখ মুখে সেদিন একটাই স্বপ্ন ছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

লেখকঃ বিল্লাল হোসেন রামিন

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat