×
  • প্রকাশিত : ২০২১-০৩-০৭
  • ৮৫০ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, অনেকে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের গ্যাটিসবার্গ ভাষণের সঙ্গে তুলনা করেন। কিন্তু আমরা মনে করি, ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য গ্যাটিসবার্গ ভাষণের তুলনায় অনেক বেশি। বস্তুত এই ভাষণের মাধ্যমে একটি জাতির স্বাধীনতাই কেবল ঘোষিত হয়নি; সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কৌশল, রণনীতি এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনসাধারণের করণীয় সম্পর্কে যে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তার তুলনা বৈশ্বিক ইতিহাসে আর কোথাও পাওয়া যায় না। আমরা দেখেছি, যত দিন যাচ্ছে এই ভাষণ নতুন নতুন তাৎপর্য নিয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সামনে হাজির হচ্ছে। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কালজয়ী এই ভাষণকে বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। এ বছর যখন আমরা ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন করছি, তখন জাতিসংঘের সব দাপ্তরিক ভাষায় ভাষণটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি শুধু নয়; বিশ্বের সব প্রান্তের নিপীড়িত মানুষের মুক্তির প্রেরণা হিসেবে এই ভাষণের তাৎপর্য আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। আমরা দেখছি, এক সময় যে ভাষণ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও প্রচারমাধ্যমে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছিল, এখন তা বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে নানা মাধ্যমে। আমরা মনে করি, অবিনাশী এই ভাষণ অনিঃশেষ প্রেরণার উৎস। এই ভাষণে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার যে আহ্বান বঙ্গবন্ধু জানিয়েছিলেন, তা মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসজুড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের জন্য উদ্দীপনার উৎস হিসেবে কাজ করেছে।

ভাষণটিতে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পাশাপাশি যে 'মুক্তির সংগ্রাম' শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন; তার তাৎপর্য স্বাধীন বাংলাদেশেও অক্ষুণ্ণ ছিল। বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় বারংবার অমোঘ সঞ্জীবনী হয়ে বারবার ফিরে এসেছে ভাষণটি। বিশেষত বজ্রকণ্ঠের সেই 'দাবায়ে রাখতে পারবা না' বাঙালির বিভিন্ন সাফল্য ও সংগ্রামে ভিন্ন ভিন্ন আবহে উচ্চারিত হয়েছে। এই শব্দবন্ধ আজও আমাদের এগিয়ে চলার অনিবার্য প্রেরণা। স্বস্তির বিষয়, দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বিলম্বে হলেও এই ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য স্বীকার করে নিয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দলটি যে অনুষ্ঠানমালা ঘোষণা করেছে, সেখানে রয়েছে ৭ মার্চেরও কর্মসূচি। আমরা দলটিকে সাধুবাদ জানিয়ে বলতে চাই, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে নিতে হলে বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব অস্বীকারের অবকাশ নেই। আমরা দেখতে চাইব, অদূর ভবিষ্যতে দলটি বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকার করে নিয়েই সামনের দিকে অগ্রসর হবে। অতীতে ক্ষুদ্র স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর মতো বৃহৎ নেতাকে স্বীকার না করার যে আত্মঘাতী অবস্থান বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গ্রহণ করেছিল; তার অবসান যত দ্রুত হবে, বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্যের পথ তত মসৃণ ও প্রশস্ত হবে। এর সুফল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলই পাবে।

একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ কেবল আনুষ্ঠানিকতার বিষয় নয়। বরং এর তাৎপর্য, শিক্ষা ও অন্তর্নিহিত বার্তা দলের নীতি ও কর্মসূচিতে যথাযথ প্রতিফলিত হতে হবে। এই ভাষণে গণতান্ত্রিক চর্চা ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে যে সুস্পষ্ট অবস্থান ঘোষিত হয়েছে, তা আজও ক্ষমতাসীনদের পথ দেখাতে পারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যক্রমে ভাষণটি স্থান পাওয়ায় নতুন প্রজন্ম নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও আদর্শ সম্পর্কে আলোকিত হবে। একই সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের জন্যও এই ভাষণ সম্পর্কিত পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা জরুরি। ভুলে যাওয়া চলবে না- স্বাধীনতা ও মুক্তির যে অমিয় বাণী সেদিন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল, তা চির প্রাসঙ্গিক। প্রেরণার চিরপ্রদীপ্ত বাতিঘর। আমাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবন এর আলোয় আলোকিত হোক এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat