×
  • প্রকাশিত : ২০২১-০৩-০৭
  • ৭৮৪ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই স্থানে 'বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য' নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। এখানেই তর্জনী উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' বঙ্গবন্ধুর সেই তর্জনী উঁচানো ভাস্কর্য হবে এখানে। ২৬ ফুট উঁচু। তৈরি করা হবে ব্রোঞ্জ দিয়ে।

চলতি মাসেই ভাস্কর্যটি নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এটি নির্মিত হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তার ভাস্কর্য উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন দ্রুততম সময়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু করতে চাই। মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নকশাসহ অন্যান্য সবকিছুই চূড়ান্ত হয়েছে। ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য এ মাসেই কার্যাদেশ আহ্বান করা হবে।'

সচিব বলেন, 'আগামী ১৬ ডিসেম্বর এই ভাস্কর্য উদ্বোধনের একটি পরিকল্পনা ছিল এবং আছে; কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। এর পরও কার্যাদেশের শর্তে ১০ মাস থেকে ১২ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার একটি বিষয় থাকবে। এখন বিষয়টি কাজের গতির ওপর নির্ভর করছে।'

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণে প্রকল্পটি হাতে নেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০০৭ সালের জুন মাস। কিন্তু দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও প্রকল্পের কাজ পুরোটা শেষ হয়নি। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের বাজেটে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর আওতায় বঙ্গবন্ধুর তর্জনী উঁচিয়ে তার ভাষণদানের ভাস্কর্য তৈরির এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণস্থলও ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি করা হবে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রাক্কালে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরের সময় সেখানে পাকিস্তানি জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি, মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরাসহ ১১ জন উপস্থিত ছিলেন।

ভাস্কর্যে মিত্রবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনীর সেই ১১ জনের আত্মসমর্পণ মুহূর্ত ফুটিয়ে তোলা হবে। টেবিলটিও হবে মূল টেবিলের মতো। মূল টেবিলটি বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। ব্রোঞ্জের তৈরি এ ভাস্কর্যটি হবে সাড়ে ১০ ফুট। এটির ভিত্তিভূমি প্রায় দেড় ফুট এবং লম্বায় প্রায় ২০ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এরই মধ্যে স্বাধীনতা প্রকল্পের দুটি পর্যায়ে সেখানে গ্লাস টাওয়ার, শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা জাদুঘর, ফোয়ারা, জলাধার ও উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এখন প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য শিশু পার্ক ভেঙে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। থাকবে থিম পার্ক, ৫৭০টি গাড়ি রাখার ভূগর্ভস্থ পার্কিং, লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো, ফোয়ারাসহ অনেক কিছু।

২০০৯ সালের ৮ জুলাই স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থান, বধ্যভূমিসহ সংশ্নিষ্ট ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রায়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণস্থলসহ ১০টি স্থান সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জন্ম এবং একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর সেই জাতি জন্মের স্বীকৃতি লাভ করেছে। যে স্থানে এই দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, সেই স্থানে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে উপলব্ধি করতে পারে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এখানে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। যদি কেউ বাঙালি হয়ে থাকে, তাহলে ওই স্থানে দাঁড়িয়ে তার প্রাণ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠবে। এ ছাড়া চোখ বন্ধ করে চিন্তা করবে, এখানে জেনারেল এ কে নিয়াজি তার বাহিনীসহ বাঙালি জাতির সম্মুখে আত্মসমর্পণ করেছিল।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ  বলেন, প্রকল্পটি অনেক বড়। এরই মধ্যে অনেক কাজই আমরা শুরু করতে পেরেছি। আর পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য শিশু একাডেমি ও শাহবাগ থানা সরিয়ে নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat