×
  • প্রকাশিত : ২০২১-০৩-০৪
  • ২৩২১ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
বাগেরহাটের শরণখোলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা বেগম। তার কাহিনি শুনলে গা শিউরে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তার স্বামী আবদুল মান্নান যোগ দেন ৯ নম্বর সাব-সেক্টর সুন্দরবন অঞ্চলে। দেশের জন্য যুদ্ধ করে চার মাসের মাথায় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় তুষখালী এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে তিনি শহীদ হন। এ খবর শুনে আয়শা বেগম পাগলের মতো ছেলেমেয়েদের নিয়ে যশোর থেকে শরণখোলায় রওনা হন। পথে হানাদার বাহিনী কুপিয়ে তাকে জখম করে, যার চিহ্ন এখনও বয়ে চলছেন। ওই সময় তার ১২ বছরের মেয়ে তাসলিমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। আজও সেই মেয়ের খোঁজ পাননি তিনি। মাত্র ছয় মাস বয়সের শিশুপুত্র কামালকে শরণখোলার বগী গ্রামে বাবার বাড়িতে রেখে স্বামী ও মেয়ে হারানোর প্রতিশোধ নিতে এবং দেশকে শত্রুমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন আয়শা। যুদ্ধে যাওয়ার পর খবর পান মায়ের বুকের দুধ না পেয়ে তার সেই ছোট শিশু কামাল মারা গেছে। দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ থেকে ফেরেননি। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা বেগমসহ পাঁচ নারী মুক্তিযোদ্ধাকে এবার আমিন জুয়েলার্স অপরাজিতা-২০২১ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। সম্মাননা জানানো বাকি চার বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন- শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী, রিজিয়া বেগম, হাফিজা বেওয়া ও শিল্পী শাহীন সামাদ।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রথমবারের মতো এবারের আয়োজনে নারী মুক্তিযোদ্ধাসহ ছয়টি ক্যাটাগরিতে ১০ জন নারীকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। সম্মাননাপ্রাপ্ত অন্যরা হচ্ছেন- কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রথম নারী উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, নারী উদ্যোক্তা ও প্রমিক্সো গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাসরুটস উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস বাংলাদেশের (এজিডব্লিউইবি) সভাপতি মৌসুমী ইসলাম, এভারেস্টজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার ও ফিফায় প্রথম বাংলাদেশি রেফারি জয়া চাকমা।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গত মঙ্গলবার এই নারী ব্যক্তিত্বদের সম্মাননা জানানোর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এ সম্মাননার আয়োজন করেছে বাঘবাংলা এন্টারটেইনমেন্ট। মিডিয়া পার্টনার ছিল দৈনিক সমকাল ও টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি। আয়োজনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম ব্যাংক ও কাজী এগ্রো এবং সহসহযোগী ভোগ বাই প্রিন্স ও ওপেন আইটি। এছাড়া রেডিও পার্টনার সিটি এফএম, ম্যাগাজিন পার্টনার ক্যানভাস ও ইভেন্ট পার্টনার বারোভূত।

অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয় মুক্তিযোদ্ধা আয়শা বেগমসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানে কথা। শহীদজায়া হিসেবে পরিচিত, জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক আলোকবর্তিকার নাম মুশতারী শফী। দেশ, সমাজ ও নারীর কল্যাণে হেঁটেছেন দীর্ঘপথ। তার চিন্তায় ষাটের দশকে গড়ে ওঠা 'বান্ধবী সংঘ' তখন ছিল নারীর অবাধ বিচরণের স্বতন্ত্র ক্যানভাস। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনন্য অবদান রেখেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণপ্রিয় স্বামী ও ছোট ভাইকে হারিয়েছেন। 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' প্রতিষ্ঠার প্রথম পরিকল্পনা তার বাসভবনে। এই বেতার কেন্দ্রসহ আগরতলায় গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat