×
  • প্রকাশিত : ২০২১-০২-২০
  • ১০৬৬ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, সেদিন ইতিহাসের মহানায়ক রফিক, সালাম, শফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম-না-জানা অনেকে শহীদ হন। তাদের রক্তের বিনিময়য়ে লেখা হয় বাংলা ভাষা। এই ঘটনার অর্ধ শতাব্দী পর আবারও আরেক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম রফিকের হাত ধরে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে ভাষার জন্য বাঙ্গালীর রক্ত দানের ইতিহাস বিশ্বময় ছড়িয়ে পরে । আর এই কাজে তাঁর সহযোগী ছিলেন আবদুস সালাম নামের আর এক বাংলাদেশী। দুজনেই কানাডাপ্রবাসী বাঙালি।      

১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি রফিকুল ইসলাম সপ্রণোদিত হয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার জন্য লিখিত আবেদন জানান জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কার্যালয়ে আবেদনটিতে মাতৃভাষার জন্য বাঙ্গালীর রক্ত দানের ইতিহাসটি তুলে ধরেন। কিন্তু তাদের প্রস্তাবটি যুক্তি সঙ্গত হলেও  জাতিসংঘ মহাসচিবের অফিস থেকে আবেদনকারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, বিষয়টির জন্য নিউইয়র্কে নয়, যোগাযোগ করতে হবে প্যারিসে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন ইউনেসকোর সঙ্গে। আর বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে উত্থাপনের কোনো সুযোগ নেইতখন কাজটিকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে রফিকুল ইসলাম আরেকজন কানাডাপ্রবাসী বাঙালী আবদুস সালামকে সঙ্গে নিলেন। দুই বন্ধু মিলে ‘A group of  Mother Language Lovers of the World’ নামে একটি সমিতি গঠন করেন। বিশ্বের সাতটি ভাষার ১০ জন সদস্য এ সংগঠনে যুক্ত হন। এ সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের সাতটি ভাষায় লিখিত এবং দশ ব্যক্তির স্বাক্ষর সংবলিত আবেদন প্যারিসে  ইউনেস্কোতে জমা দেওয়া হয়।    

আবেদনের প্রাথমিক জবাবে ইউনেস্কোর শিক্ষাবিষয়ক প্রকল্প বিশেষজ্ঞ আনা মারিয়া ওই সমিতিকে জানায়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। তবে কোনো সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।এরপর কানাডা থেকে রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশে সরকারের সাথে  যোগাযোগ করেন। বিষয়টি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। তিনি বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে দ্রুত রাষ্ট্রীয়ভাবে ইউনেসকোর সদর দপ্তরে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠান। এরপর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকোর ৩০তম অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাস হয়। মাতৃভাষার জন্য বাঙ্গালীর রক্ত দানের ইতিহাস পায় বিশ্ব স্বীকৃতি২১ ফেব্রুয়ারি পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা। ঠিক পরের বছর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। এখন বিশ্বের প্রায় ১৯৩টি দেশ মাতৃভাষার জন্য শহীদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।   

ভাষা শহীদ রফিক , সালামের সাথে একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেয়া “রফিক, সালাম” নামের এই কাকতালীয় ব্যাপারটিও যেনো বিশ্বের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। তবে বাংলাভাষাকে আন্তর্জাতির স্বীকৃতি এনে দেয়া দুই বাঙ্গালীর কৃতিত্ব এখনও আগোচরে রয়ে গেছে। ভাষা মাসে মহান এই নিভৃতচারী দুই বাঙ্গালীর প্রতি রইল শ্রদ্ধা।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat