দরিদ্র-অসহায় হাজার হাজার পরিবারকে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঘর উপহার দিয়েছেন, তার অংশীদার হয়েছেন সাঁওতাল-পাটনিদের মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরাও।
অন্যের জমি চাষ করে ভাগের ফসলে কোনো রকমে খেয়ে-পরে বেঁচেছিল যে সাঁওতাল পরিবার, তারা এখন পল্লীর স্বচ্ছল পরিবারের মতো পাকা মেঝের ঘরে মাথা রাখছেন। আবার বাঁশ-বেত কেটে কুলা-ডালা বানিয়ে যারা জীবন চালাচ্ছিলেন সেই পাটনিদের ভিটায়ও উঠেছে মজবুত ঘর।
অনেকের কাছেই ‘ছোট্ট’ এই উপহার এসব মানুষের কাছে এসেছে জীবন বদলের উপকরণ হিসেবে।
এতদিনের মাটির ঘরের বসত থেকে নতুন ঘরে উঠে উচ্ছ্বসিত গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের চাঙ্গরা গ্রামের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের এলিজাবেথ মুরমু (৩৮)।
জানান “অন্যের জমিতে কাজ করে আগে কোনো রকমভাবে জীবন কাটাতাম, থাকতাম মাটির ঘরে। শীত, রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে ছিলাম বড়ই অসহায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এখন ঘর করে দিয়েছেন। পেয়েছি নিজের ঠিকানা, সম্মান। এজন্য তার প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা ও দোয়া।”
এলিজাবেথের মতো তার গ্রামের ৫০টি সাঁওতাল পরিবার প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার পেয়েছেন। তাদের ভাষ্য মতে, এই ঘর কেবল তাদের আশ্রয়ই দেয়নি, দিয়েছে সম্মানও।
এলিজাবেথের স্বামী বার্নার্ড বাথুরাম হাজদার বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর। তিনি কৃষিকাজ করে সংসার চালান। ছেলে সপ্তাপ্ত (১৫) ও মেয়ে শতাব্দীকে (২০) নিয়ে এলিজাবেথ থাকেন তার বাবার বাড়ি চাঙ্গরাতেই।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় বসবাসকারী পাটনি সম্প্রদায়ের সদস্যরা বাঁশ দিয়ে ডালা, কুলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিনের আয় দিয়ে জীবন চালানো মানুষগুলো থাকতেন জীর্ণ ঘরে। নতুন ঘর পেয়ে তাদের জীবনেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া।
পাটনি সম্প্রদায়ের সদস্য ষাটোর্ধ্ব বিনোদ বিহারী দাস বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ঘর দিয়ে যা উপকার করলেন তা ভোলার নয়। আমরা তার জন্য প্রার্থনা করি। দেশে তার সরকার থাকুক এইটা চাই।”
এই গ্রামের আরেক বাসিন্দা সাবিত্রী রানী দাস। প্রায় চার দশক আগে স্বামী বিনু রাম দাস মারা গেলে বাঁশের সরঞ্জাম বিক্রির আয় দিয়ে তিনি দুই ছেলেকে বড় করেছেন।
সংগ্রামী এই নারী বলেন, “আমরা ঘর পেয়ে যে কত খুশি তা মুখে বলে বোঝানো যাবে না। এখন এই ঘরে বসেই আমরা প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও নিজেদের কাজগুলো চালিয়ে যেতে পারছি। হাতে যা তৈরি করছি সেগুলো বিক্রির আগে নিজেদের ঘরে নিরাপদে রেখে সংরক্ষণও করতে পারছি সহজেই।”
মুজিববর্ষে সমতলে বসবাস করা ৬১ জেলার ৩ হাজার ৫০০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারকে ঘর করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই অংশ হিসেবে সাড়ে তিন হাজার নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে অনেকেই নতুন ঘরে উঠেছেন। ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব (পিএমও) তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোকে সাড়ে ৩ হাজার ঘর উপহার দেওয়ার পাশাপাশি এসব পরিবারের স্কুলগামী শিশুদের বাইসাইকেল ও বৃত্তি দিয়েছেন, যাতে তারা সহজে শিক্ষা পেতে পারে।
এদের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যেও ইতোমধ্যে সাড়ে চার হাজার ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।