×
  • প্রকাশিত : ২০২০-১২-৩১
  • ১১৭২ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

আজকের সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে আরেকটি খ্রিস্টীয় বছর ২০২০ বিদায় নেবে। বছরটি পৃথিবীকে দিয়েছে মহামারীর তাণ্ডব, মৃত্যুর মিছিল, কর্মহারা জীবন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এ পরিস্থিতির মধ্যেই রাত পেরিয়ে ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসবে আরেকটি নতুন বছর। আর নতুন বছর নিয়ে মানুষ আশায় বুক বাঁধবে। করোনামুক্ত ঝলমলে একটি বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পথচলা শুরু করবে।আজ রাত ১২টা পেরোলেই শুরু হবে নতুন খ্রিস্টীয় বছর ২০২১। আর ভোরবেলাতেই উদয় হবে নতুন বছরের নতুন সূর্য।

আমাদের জীবনের সব কর্মকাণ্ড ইংরেজি সালের গণনায় হয়, তাই খ্রিস্টীয় বছর বিশেষ গুরুত্ববাহী। সেই বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন গেল তার হিসাব কষবেন সবাই। ভালো-মন্দ, আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন।

ফিরে তাকানো যাক কি ঘটেছিল ২০২০ সালে। বছরটি যখন শুরু হয়, তখন পৃথিবীর মানুষ নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার সংকল্প করে। কিন্তু বছরের ২ মাসের মাথায় পৃথিবীর মানুষের সামনে আসে ভয়াবহ এক বিপদ। চীনের উহানে প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর খবরে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে। নড়েচড়ে বসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

নানা ধরনের দিকনির্দেশনা দেয় দেশগুলোকে। এরপরই একে একে বন্ধ হতে থাকে বিমান চলাচল। অনেক দেশের সীমানা বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশ অভ্যন্তরীণভাবে লকডাউন দিয়ে নাগরিকদের সুরক্ষার চেষ্টা করে। এতেও কাজ চলছিল না। পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলোতে বড় হতে থাকে মৃত্যুর মিছিল। বিদায়ী বছরের শেষে এসে বিশ্বের প্রায় ১৮ লাখ মানুষের মৃত্যুর খবর জানা যায়। আক্রান্ত হন আট কোটিরও বেশি মানুষ।

করোনার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমন কোনো জয়াগা নেই যেখানে করোনার প্রভাব পড়েনি। কর্মহীন হয়েছেন দেশের অনেক মানুষ। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে বড় বড় শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। করোনায় বড় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। পুরোটা বছরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। নিচের ক্লাসেও পরীক্ষা ছাড়াই অটো প্রমোশনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

করোনার শুরুর হওয়ার পরপরই বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে চলে আসেন। এদের বড় একটি অংশ সৌদি প্রবাসী। এরাই পরে সৌদি ফিরতে গিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। এ কারণে রাজধানীতে তারা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে ফ্লাইট চালু করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সবার ফেরা নিয়ে জটিলতা না কাটলে রাস্তায় নামেন তারা। সেই অনিশ্চয়তা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। করোনার এ সময়ে সরকার নানাভাবে প্রণোদনা দিয়ে, সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছে। প্রণোদনা কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।

করোনা মহামারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নেয়া বড় বড় সিরিজ কর্মসূচি পালনের পথে বাধা সৃষ্টি করে। কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের এ সুনীল সময়ে দেশের মানুষ উগ্রবাদীদের তাণ্ডব দেখেছেন। হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য আসতে থাকে। ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী দলগুলোর আন্দোলনের মধ্যেই ৫ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাংচুর করা হয়। ঘটনাটি পুরো জাতির মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

নানা দুঃসংবাদের ভিড়ে বিদায়ী ২০২০ সালে দেশের মানুষের জন্য অন্যরকম একটি সুসংবাদ পেয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয় ১০ ডিসেম্বর। ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছে- এ জাতি চাইলেই পারে কারও সাহায্য না নিয়ে নিজেদের অর্থায়নে নিজেদের স্বপ্নকে পূরণ করতে।

২০২০ সালের ১০ মার্চ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রায় প্রদান করেন হাইকোর্ট। সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ১৩ অক্টোবর ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

বছরটিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনার বিষয় ছিল মার্কিন নির্বাচন। দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৩ নভেম্বর। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। নানা নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হন। যদিও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প ভোট জালিয়াতি এবং ব্যালট চুরির অভিযোগ এনে দাবি করেন- তিনিই জয়ী হয়েছেন। এ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম একজন নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার নাম কমলা হ্যারিস।

করোনা মহামারীতে পুরো বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত ঠিক তখন আশার আলো হিসেবে ৯ নভেম্বর আমেরিকান কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক যৌথভাবে টিকা উদ্ভাবনের কথা জানায়। এ খবরে বিশ্বে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে।

২০২১ সালে পৃথিবী কেমন হবে তা এখনও সবার অজানা। তবে ২০২০-এর আলোকে সবার চোখ থাকবে করোনাভাইরাসের টিকার দিকে। এ টিকাকে ঘিরে বিশ্বে নানা প্রান্তে কি মেরুকরণ হয় তাতেও চোখ থাকবে বিশ্বের মানুষের। যত বাধাই আসুক তা অতিক্রম করে ২০২১ সালে পৃথিবীর মানুষ এগিয়ে যাবে। পৃথিবী হবে আরও সুন্দর ও শান্তিময়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat